প্রকল্পের পটভূমি
স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি) বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্রতীরবর্তী এলাকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও International Fund for Agricultural Development (IFAD) এর যৌথ অর্থায়নে কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চারটি সংস্থা (ডিএই-লীড এজেন্সি, ডিএএম, বিএআরআই ও বিএডিসি) এর মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর্ন্তজাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (IFAD) বাংলাদেশের কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে বিগত ৪০ বছর ধরে কাজ করছে। এসএসিপি (SACP) প্রকল্পটি সমন্বিত মডেল প্রকল্প হিসেবে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন, আহরণ ও প্রয়োগের প্রসার ঘটিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি প্রবন উপকূলীয় অঞ্চলে উচ্চমূল্যের ফসল চাষের অভিযোজন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে অবদান রাখছে। পাশাপাশি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনার টেকসই প্রযুক্তি প্রয়োগ এবং উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মূল্য সংযোজন ও বাজারজাতকরণে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ব্যবহারিক পদ্ধতি অনুশীলনের মাধ্যমে কৃষি পেশাকে কৃষকের জন্য লাভজনক করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। এসএসিপি প্রকল্পটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১১ টি জেলার ৩০ টি উপজেলার ২৫০ টি ইউনিয়নে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের সূচকগুলির মধ্যে রয়েছে
(১) অন্তত ২,৫০,০০০ পল্লী পরিবার বা ১,৪০০,০০০ মানুষ উপকৃত হবে, অর্থাৎ বাংলাদেশের কৃষিজাত ক্ষুদ্র ধারার মাধ্যমে জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ উচ্চতর ফসল উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাত পণ্যগুলির বিপণনে প্রতিযোগিতা
(২) টেকসই উৎপাদনের গতি বৃদ্ধি এবং মহিলাদের ডায়েটারি ডাইভারসিটি (MDDW) স্কোর উন্নীতকরণ; (৩) চাহিদা-ভিত্তিক উৎপাদনশীল বিনিয়োগ, ফসলের বৈচিত্র্যকরণ এবং বাজারের সংযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকের আয় ও জীবিকার উন্নয়ন এবং
(৪) নতুন ও বিদ্যমান প্রযুক্তিগুলির গবেষণা, সম্প্রসারণ এবং কৃষি-পরিবেশগত সীমাবদ্ধতার সাথে অভিযোজিত হিসেবে পরিকল্পনা গ্রহণ।
এসএসিপি প্রকল্পের অর্জিত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে জুলাই, ২০২৩-জুন, ২০২৬ মেয়াদে সম্প্রসারিত ১৪ জেলার ৬০টি উপজেলায় রেইনস শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। বর্ণিত প্রকল্পটি চারটি এজেন্সি কর্তৃক (DAE, DAM, FAO ও GAIN) বাস্তবায়িত হবে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি কৃষি। কৃষির উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা, অপুষ্টি ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) এর আওতায় এসএসিপি-রেইনস্ শীর্ষক প্রকল্পটি কাজ করবে। দারিদ্র্যমুক্ত, আত্মনির্ভরশীল ও সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে এ প্রকল্পের অবদান উল্লেখযোগ্য হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ পুষ্টি উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে এসএসিপি-রেইনস্ একটি বৃহৎ সরকারি উদ্যোগ। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জনবহুল ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে পরিচিত। দেশ ইতোমধ্যে প্রধান খাদ্যশস্য (ধান) উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও উচ্চমূল্য ফসল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছ। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, মৌসুমি আবহাওয়া এবং নাতিশীতোষ্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে প্রচুর পরিমাণে ঋতুভিত্তিক উচ্চমূল্য ফসল যেমন বিভিন্ন প্রকার মৌসুমি ফল-মূল, পুষ্টি সমৃদ্ধ উচ্চমূল্যের সবজি ফসল, ডাল জাতীয় ফসল (যেমন-মুগ) তৈলবীজ জাতীয় ফসল (যেমন-তিল, সূর্যমূখী ও চিনাবাদাম ইত্যাদি) এবং ভূট্টা উৎপাদনের সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান, তথ্য, পুঁজি, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সুষ্ঠু বাজারজাতকরণের অভাবে ফসল উৎপাদন অনেকটা অলাভজনক হিসেবে কৃষক মনে করেন। ফলে চাষিরা বিশেষতঃ ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গা চাষিদের ফসল উৎপাদনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ক্রমশঃ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। অথচ এসব উচ্চমূল্য ফসলের ব্যাপক চহিদা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন ও সরবরাহের মধ্যে সামঞ্জস্য নেই। এর ফলে বাজার দর উঠানামা করে এবং মূল্য বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে এ সকল উচ্চমূল্য ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলে অস্বাভাবিক বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো মজবুত রাখতে অবদান রাখবে।
এ সকল ফসল উৎপাদনে উৎসাহ, পুঁজির যোগান এবং প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সহায়ক সহযোগিতা প্রদান করা হলে উচ্চমূল্য ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তার বাড়তি বলয় সৃষ্টি হবে, অন্যদিকে কৃষির মানোন্নয়নসহ খাদ্যাভাস পরিবর্তনের বহুবিধ ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। উচ্চমূল্য ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি, চাষযোগ্য পতিত জমির অধিক ব্যবহার (বসতবাড়ির আঙ্গিনায়), সঠিক সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি, নারী ও যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও দারিদ্র বিমোচন করার লক্ষ্যে বর্তমানে প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সরকার (জিওবি) ও বৈদেশিক দাতা সংস্থা ইফাদ (আরপিএল ও ডিপিজি)* এর অর্থায়নে ২৮৫.৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে এসএসিপি-আরএআইএনএস (SACP-RAINS) নামে উচ্চ মূল্যের পুষ্টি সমৃদ্ধ ফসল উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ এর জন্য জুন, ২০২৬ পর্যন্ত প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
এ প্রকল্পের এলাকাসমূহ বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলসমূহে অবস্থিত। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের উপকূলীয়, চরাঞ্চল এবং বরেন্দ্র এলাকার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদেরকে উচ্চমূল্যের ফসল চাষে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে। প্রকল্পের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চল (উপকূলবর্তী), বরেন্দ্র এবং চরাঞ্চলসমূহে জলবায়ুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ফসলের আবাদ সম্প্রসারণ করে উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, বাস্তবসম্মত আধুনিক পদ্ধতি ও প্রযুক্তির সূচনা, ফসল সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, ভ্যালুচেইন ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং ভূ-উপরিস্থ ও মাটির নীচের পানির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার উপর জোর দেয়া হয়েছে। এর ফলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের পক্ষে অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত মোকাবেলা করা সহজ হবে।
ইফাদ (IFAD) বাংলাদেশে কান্ট্রি প্রোগ্রাম শুরুর পর থেকে সর্বস্তরের বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থার সাথে নিবিড়ভাবে সহযোগিতা করে আসছে এবং দেশে উন্নয়ন সহায়তা দানকারী সংস্থাসমূহের সাথে কার্যকর অংশীদারিত্ব গড়ে তুলছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাথে প্রত্যক্ষ অংশীদারিত্বের মাধ্যমে ইফাদ (IFAD এ দেশের কৃষির উন্নয়নের জন্য নিয়োজিত সংস্থাগুলোকে সাথে নিয়ে বাস্তবায়নাধীন এসএসিপি-রেইনস্ শীর্ষক প্রকল্পটি বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে খোরপোষ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরকরণের লক্ষ্যে প্রণীত সরকারের কৌশলগত মাস্টার প্ল্যানকে অনুসরণ করছে।
প্রকল্পের মূল ফোকাসসমূহঃ
- ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষী কৃষক বিশেষত: নারী ও যুবকদের সংগঠিত করা ও উচ্চমূল্য পুষ্টি সমৃদ্ধ ফসল চাষে উদ্বুদ্ধকরণ;
- সদস্যদের নিজস্ব মূলধন সৃষ্টি ও তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ;
- উচ্চমূল্য ফসল চাষের লক্ষ্যে মানব সম্পদ উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান;
- আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং দারিদ্রদ্র্য হ্রাসকরণ;
- সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন সহায়তা প্রদান;
- মার্কেট লিংকেজ স্থাপন ও কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা;
- প্রকল্প কার্যক্রমে জেন্ডার সমতা ও গ্রামীণ নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও কৃষিতে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি; এছাড়াও প্রকল্পে Gender Mainstreaming and Social Inclusion সংক্রান্ত বিষয়গুলো বিশেষত নিউট্রিশন, ফুড সেইফটি, ইয়ুথ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ততার (Climate Vulnerability) ক্ষেত্রে অভিযোজন কলাকৌশল।
উদ্যোগী মন্ত্রণালয় : কৃষি মন্ত্রণালয়
বাস্তবায়নকারী সংস্থা:
১। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)-লিড এজেন্সি
২। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম)
৩। টিএ পার্ট-জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)
৪। জিএআইএন-গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন
আরএআইএনএস (RAINS) প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় (কোটি টাকায়):
উৎস ধরণ | অর্থায়ন | অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয় | সংস্থা/ উন্নয়ন সহযোগী |
অনুদান | জিওবি | ৮১.৬০ | বাংলাদেশ সরকার |
আরপিজি ও ডিপিজি (আরএআইএনএস) | ২০৪.০০ | ইফাদ/জিএএফএসপি | |
মোট প্রকল্প ব্যয় | জিওবি এবং আরপিজি ও ডিপিজি | ২৮৫.৬০ |
* আরপিএল ও ডিপিজি রিইম্বারসিবল প্রজেক্ট লোন ও ডিপিজি ডাইরেক্ট প্রজেক্ট গ্রান্ট।
বৈদেশিক সহায়তা
উন্নয়ন সহযোগী দেশ/সংস্থার নাম | IFAD, GAFSP |
অর্থায়নের ধরণ | ঋণ ও অনুদান |
অর্থ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা সংক্রান্ত তথ্য | ইফাদ কর্তৃক অনুমোদন ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) কর্তৃক ঋণ গ্রহণে সম্মতিপত্রসহ ফাইনান্সিয়াল এগ্রিমেন্ট। |
প্রকল্পের মেয়াদকাল:
২য় সংশোধন | |
আরম্ভ | জুলাই ২০১৮ |
সমাপ্তি | জুন ২০২৬ |
প্রকল্পের উদ্দেশ্যঃ
জলবায়ু পরিবর্তনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে চাহিদাভিত্তিক উচ্চমূল্য পুষ্টি সমৃদ্ধ ফসলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, ফসল চাষে বৈচিত্র্য আনায়ন ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি, নারী ও যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করা।
——————————————————————————————–